অ-সুখ বিলাস
প্রায় তিনবছর পর তিনদিন জ্বরে ভুগলাম। আমি ধারনা করেছি চিকেন গুনিয়া।
সাধারনত আমি জ্বর, ঠান্ডা, সর্দি-কাশি এইগুলোতে ভুগি না। ছোটবেলায় এতবার অসুস্থ হয়েছি যে আমার ধারনা আমার বডিতে ইতিমধ্যে হাজার হাজার এন্টিবডি তৈরি হয়ে বসে আছে। নতুন করে ভাইরাস ঢুকতে গেলেই বলে - এই ব্যাটা তোকে তো চিনি। তুই আবার এসেছিস?
অসুস্থতা এবার কিছুটা উপভোগ করেছি। কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। এই তিনদিনের বেশিরভাগ সময়ই আমি ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিয়েছি। কারন আমাদের শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ব্যবস্থা সবচেয়ে ভালো কাজ করে যখন আমরা ঘুমিয়ে থাকি। রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, প্রোটিন তৈরি করে আক্রান্ত স্থানের জন্য নতুন কোষ তৈরি, সেল রিপেয়ার ইত্যাদি নানা কাজে সে তখন মনযোগ দিতে পারে। ঘুম তাই উত্তম চিকিৎসা।
চিকেন গুনিয়ার নামে কেন "চিকেন" আছে এটা আমি জানি না। তবে মারাত্বক বিরক্তিকর একটা জ্বর। সারা শরীরের জয়েন্ট এ ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে। মানুষের আদি পুরুষের মত এই ভাইরাসও (CHIKV) আফ্রিকা থেকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়েছে।
ক্লায়েন্টের নতুন কোন কাজ ছিলনা। নিজের লেখালেখি থেকেও ছুটি। সেই সাথে বাইরে তুমুল বৃষ্টি আর জ্বরের ঘোরে একটা নেশাতুর অবস্থা, সব মিলিয়ে সোনায় সোহাগা যাকে বলে।
"আমি সহজে অসুস্থ হই না" - এই কথাটা যতবার আমি বলি, আমার আশেপাশের বন্ধুবান্ধব খুব বিরক্ত হয়। তারা মনে করে আমি নিজেকে সুপারম্যান দাবি করছি। ব্যাপারটা আসলে সেরকম না। জীবন যাপনে আমি কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলি। আমি বিশ্বাস করি আমাদের বেশিরভাগ সমস্যা খাবার থেকেই শুরু হয়। আমি খুব পরিমিত আহার করি। বাধ্য না হলে আমি বাইরের খাবার খেতে চাই না। বুদ্ধি হবার পর থেকে রাস্তায় বানানো খাবার খাই না।
আমি চিনি খাই না। মিষ্টি জাতীয় যেকোন জিনিস থেকে আমি দশহাত দূরে থাকার চেষ্টা করি। ফ্রিজে কোন খাবার দুই দিনের বেশি থাকলে আমি আর সেটা খাই না। বাসার ফ্রিজে যদি কেউ খোলা পাত্রে খাবার রাখে, আমি সেটাও ফেলে দেই। ব্যাকটেরিয়া আর ভাইরাসের অভাব নাই আমাদের ফ্রিজে। এরা খুব আরামে থাকে ফ্রিজের তাপমাত্রায়। সেখানে খোলা পাত্রে খাবার রাখাটা একধরনের অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।
এখন খেতে হলে আমি এখনই রান্না করার লোক। রান্না করে পরে খাবো এই চিন্তাটা আমাকে পীড়া দেয়।
আমি আসলে অসুস্থ হতে চাই না। কয়দিন আগেই মাকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়াদোড়ি করতে হয়েছে সপ্তাহখানেক। হাসপাতালে আমাকে প্রতিমাসে অন্যদের জন্য এতবার যেতে হয় যে আমার হাসপাতাল ভীতি ধরে গেছে একরকমের। আমি জানি আমি অসুস্থ হলে আসলে আমাকে সেবা করার কেউ নেই। আমার কাজগুলো করার কেউ নেই। আমার খাবার বানিয়ে দেবার কেউ নেই, আমার আবদার রক্ষা করার লোক নেই।
বড় হবার একটা ভীষণ যন্ত্রনা আছে। আপনি স্বাধীনতা পাবেন কিন্তু সেটা অন্যেরা কেড়ে নেবে। আপনার সময় কেড়ে নেবে ভালোবাসার নামে। উপার্জিত অর্থ কেড়ে নেবে দায়িত্বের নামে। আমি তাই অসুস্থ হতে চাই না, কারন আমাকে দেখে রাখার কেউ নাই।
মৃদু জ্বর, মাথা ব্যাথা, সর্দি কাশি, পেট ব্যাথা, মন খারাপ ইত্যাদি তাই আমার কখনো হয় না। আমি সহজে অসুস্থ হইনা। অসুস্থ হবার মত বিলাসিতা আমার নেই।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন