আমাদের ব্যর্থ রাষ্ট্র

এইটা একটা বিখ্যাত ছবি হতে যাচ্ছে। কারন প্রতিদিনতো আকাশ থেকে টুপ করে বিমান পড়ে স্কুলের বাচ্চা মারা যায় না! তাই এইরকম ধবংসস্তুপ দেখতে পাওয়াটা দূর্লভ।
সোমবার ২১শে জুলাই, বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষন বিমান ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের উপর গিয়ে পড়ে। হতাহতের সংখ্যা কেউ সঠিক বলছে না। তবে গোনা যাবে একসময়। কারন স্কুলের বাচ্চাদের পরিবার আছে, হাজিরার সিস্টেম আছে।
আমি সারাদিন অনেক কিছু লেখার চেষ্টা করেও লিখতে পারিনি। কোন কাজও করতে পারিনি গত দুইদিন। মানুষের সীমাহীন অভিযোগ আর একে অপরের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা দেখছিলাম সোশ্যাল মিডিয়ায়। নিহত বৈমানিককে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শায়িত করা হয়েছে। মৃত বাচ্চাদের যাদের দেহ পাওয়া গিয়েছে পরিবারের লোকজন নিজের মত করে সৎকার করেছেন। রাষ্ট্র চুপ হয়ে আছে। অসভ্য রাষ্ট্র, আ ফেইল্ড স্টেইট।
পৃথিবীর যেকোন উন্নত রাষ্ট্র সর্বোচ্চ চেষ্টা করে তার বাচ্চাদের বাচানোর জন্য। তাদের জন্য আলাদা স্কুল বাস, সেটা অতিক্রম করলে কঠিন জরিমানার ব্যবস্থা থাকে। স্কুলের আশেপাশে অনেক জায়গা জুড়ে নিরাপত্তা বলয়, মাইনর হিসেবে তাকে সর্বোচ্চ সুবিধা দেয়া, যাতে ঠিকমত পড়াশোনা করতে পারে সেজন্য যা যা করা দরকার, ইত্যাদি হাজার রকম বিষয় নিয়ে তারা কাজ করে।
যদি সেখানে এরকম ট্র্যাজেডি হত তবে এতক্ষনে তাদের সরকার নড়েচড়ে বসত অথবা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পদত্যাগ করত। ভাগ্যিস আমাদের কোন সরকার নেই। আমাদের আছে শিক্ষার নামে ব্যবসা আর দেশপ্রেমের নামে ইতরামি।
আমরা আমাদের বাচ্চাদের শিখিয়েছি রাস্তায় আন্দোলন আর নেতা হতে হলে কি করতে হয় সেটা। We have failed our children.
একটা জাতি ধর্মের নামে নোংরামি করে, জাতীয়বাদের চেতনায় দূর্নীতি করে, কেউ বিপদে পড়লে তামাশা দেখে, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে সারা পৃথিবীর থেকে পিছিয়ে, নূন্যতম সিভিক সেন্স নাই - এইখানে এর থেকে বড় দূর্যোগ আসলে ব্লাডি সিভিলিয়ান হাজারে হাজারে মরবে।
আঙ্গুল তুলে ভুল দেখিয়ে দেবার হাজারটা জায়গা আছে। আজকে কিছুই করতে চাচ্ছি না। খুব ক্লান্ত লাগছে। গত জুলাই থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও কেউ মরছে।
রাষ্ট্র বলে আলাদা কিছুর অস্তিত্ব নেই। যেখানে একদল মানুষের চিন্তার প্রতিফলন ঘটে সেটাই রাষ্ট্র। আমাদের চিন্তা অস্বচ্ছ, অসৎ, লোভাতুর আর ধার্মিক।
দূর্ঘটনা ঘটতেই পারে, কিন্তু সেটা ঘটার উপকরণ যদি রাষ্ট্র ছড়িয়ে রাখে তবে সেই রাষ্ট্র একটা বাতিল চিন্তা-ভাবনা নিয়ে এগুচ্ছে। বাংলাদেশ একটা মৃত্যুপুরী, এইখানে বেঁচে থাকাটাই একটা যুদ্ধের মত। এটাই প্রথম বা শেষ নয়, সামনে আরো দূর্যোগ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। সবকিছু একটা চেইন রি-অ্যাকশনের মত কাজ করে।