পোস্টগুলি

জুলাই, ২০২৫ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

আমাদের ব্যর্থ রাষ্ট্র

এইটা একটা বিখ্যাত ছবি হতে যাচ্ছে। কারন প্রতিদিনতো আকাশ থেকে টুপ করে বিমান পড়ে স্কুলের বাচ্চা মারা যায় না! তাই এইরকম ধবংসস্তুপ দেখতে পাওয়াটা দূর্লভ।

সোমবার ২১শে জুলাই, বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষন বিমান ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের উপর গিয়ে পড়ে। হতাহতের সংখ্যা কেউ সঠিক বলছে না। তবে গোনা যাবে একসময়। কারন স্কুলের বাচ্চাদের পরিবার আছে, হাজিরার সিস্টেম আছে।

আমি সারাদিন অনেক কিছু লেখার চেষ্টা করেও লিখতে পারিনি। কোন কাজও করতে পারিনি গত দুইদিন। মানুষের সীমাহীন অভিযোগ আর একে অপরের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা দেখছিলাম সোশ্যাল মিডিয়ায়। নিহত বৈমানিককে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শায়িত করা হয়েছে। মৃত বাচ্চাদের যাদের দেহ পাওয়া গিয়েছে পরিবারের লোকজন নিজের মত করে সৎকার করেছেন। রাষ্ট্র চুপ হয়ে আছে। অসভ্য রাষ্ট্র, আ ফেইল্ড স্টেইট।

পৃথিবীর যেকোন উন্নত রাষ্ট্র সর্বোচ্চ চেষ্টা করে তার বাচ্চাদের বাচানোর জন্য। তাদের জন্য আলাদা স্কুল বাস, সেটা অতিক্রম করলে কঠিন জরিমানার ব্যবস্থা থাকে। স্কুলের আশেপাশে অনেক জায়গা জুড়ে নিরাপত্তা বলয়, মাইনর হিসেবে তাকে সর্বোচ্চ সুবিধা দেয়া, যাতে ঠিকমত পড়াশোনা করতে পারে সেজন্য যা যা করা দরকার, ইত্যাদি হাজার রকম বিষয় নিয়ে তারা কাজ করে।

যদি সেখানে এরকম ট্র্যাজেডি হত তবে এতক্ষনে তাদের সরকার নড়েচড়ে বসত অথবা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পদত্যাগ করত। ভাগ্যিস আমাদের কোন সরকার নেই। আমাদের আছে শিক্ষার নামে ব্যবসা আর দেশপ্রেমের নামে ইতরামি। 

আমরা আমাদের বাচ্চাদের শিখিয়েছি রাস্তায় আন্দোলন আর নেতা হতে হলে কি করতে হয় সেটা। We have failed our children. 

একটা জাতি ধর্মের নামে নোংরামি করে, জাতীয়বাদের চেতনায় দূর্নীতি করে, কেউ বিপদে পড়লে তামাশা দেখে, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে সারা পৃথিবীর থেকে পিছিয়ে, নূন্যতম সিভিক সেন্স নাই - এইখানে এর থেকে বড় দূর্যোগ আসলে ব্লাডি সিভিলিয়ান হাজারে হাজারে মরবে।

আঙ্গুল তুলে ভুল দেখিয়ে দেবার হাজারটা জায়গা আছে। আজকে কিছুই করতে চাচ্ছি না। খুব ক্লান্ত লাগছে। গত জুলাই থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও কেউ মরছে।

রাষ্ট্র বলে আলাদা কিছুর অস্তিত্ব নেই। যেখানে একদল মানুষের চিন্তার প্রতিফলন ঘটে সেটাই রাষ্ট্র। আমাদের চিন্তা অস্বচ্ছ, অসৎ, লোভাতুর আর ধার্মিক। 

দূর্ঘটনা ঘটতেই পারে, কিন্তু সেটা ঘটার উপকরণ যদি রাষ্ট্র ছড়িয়ে রাখে তবে সেই রাষ্ট্র একটা বাতিল চিন্তা-ভাবনা নিয়ে এগুচ্ছে। বাংলাদেশ একটা মৃত্যুপুরী, এইখানে বেঁচে থাকাটাই একটা যুদ্ধের মত। এটাই প্রথম বা শেষ নয়, সামনে আরো দূর্যোগ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। সবকিছু একটা চেইন রি-অ্যাকশনের মত  কাজ করে।

 

অ-সুখ বিলাস

প্রায় তিনবছর পর তিনদিন জ্বরে ভুগলাম। আমি ধারনা করেছি চিকেন গুনিয়া। 

সাধারনত আমি জ্বর, ঠান্ডা, সর্দি-কাশি এইগুলোতে ভুগি না। ছোটবেলায় এতবার অসুস্থ হয়েছি যে আমার ধারনা আমার বডিতে ইতিমধ্যে হাজার হাজার এন্টিবডি তৈরি হয়ে বসে আছে। নতুন করে ভাইরাস ঢুকতে গেলেই বলে - এই ব্যাটা তোকে তো চিনি। তুই আবার এসেছিস?

অসুস্থতা এবার কিছুটা উপভোগ করেছি। কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। এই তিনদিনের বেশিরভাগ  সময়ই আমি ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিয়েছি। কারন আমাদের শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ব্যবস্থা সবচেয়ে ভালো কাজ করে যখন আমরা ঘুমিয়ে থাকি। রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, প্রোটিন তৈরি করে আক্রান্ত স্থানের জন্য নতুন কোষ তৈরি, সেল রিপেয়ার ইত্যাদি নানা কাজে সে তখন মনযোগ দিতে পারে। ঘুম তাই উত্তম চিকিৎসা।

চিকেন গুনিয়ার নামে কেন "চিকেন" আছে এটা আমি জানি না। তবে মারাত্বক বিরক্তিকর একটা জ্বর। সারা শরীরের জয়েন্ট এ ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে। মানুষের আদি পুরুষের মত এই ভাইরাসও (CHIKV) আফ্রিকা থেকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়েছে।

ক্লায়েন্টের নতুন কোন কাজ ছিলনা। নিজের লেখালেখি থেকেও ছুটি। সেই সাথে বাইরে তুমুল বৃষ্টি আর জ্বরের ঘোরে একটা নেশাতুর অবস্থা, সব মিলিয়ে সোনায় সোহাগা যাকে বলে।  

"আমি সহজে অসুস্থ হই না" - এই কথাটা যতবার আমি বলি, আমার আশেপাশের বন্ধুবান্ধব খুব বিরক্ত হয়। তারা মনে করে আমি নিজেকে সুপারম্যান দাবি করছি। ব্যাপারটা আসলে সেরকম না। জীবন যাপনে আমি কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলি। আমি বিশ্বাস করি আমাদের বেশিরভাগ সমস্যা খাবার থেকেই শুরু হয়। আমি খুব পরিমিত আহার করি। বাধ্য না হলে আমি বাইরের খাবার খেতে চাই না। বুদ্ধি হবার পর থেকে রাস্তায় বানানো খাবার খাই না।

আমি চিনি খাই না। মিষ্টি জাতীয় যেকোন জিনিস থেকে আমি দশহাত দূরে থাকার চেষ্টা করি। ফ্রিজে কোন খাবার দুই দিনের বেশি থাকলে আমি আর সেটা খাই না। বাসার ফ্রিজে যদি কেউ খোলা পাত্রে খাবার রাখে, আমি সেটাও ফেলে দেই। ব্যাকটেরিয়া আর ভাইরাসের অভাব নাই আমাদের ফ্রিজে। এরা খুব আরামে থাকে ফ্রিজের তাপমাত্রায়। সেখানে খোলা পাত্রে খাবার রাখাটা একধরনের অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।

এখন খেতে হলে আমি এখনই রান্না করার লোক। রান্না করে পরে খাবো এই চিন্তাটা আমাকে পীড়া দেয়। 

আমি আসলে অসুস্থ হতে চাই না। কয়দিন আগেই মাকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়াদোড়ি করতে হয়েছে সপ্তাহখানেক। হাসপাতালে আমাকে প্রতিমাসে অন্যদের জন্য এতবার যেতে হয় যে আমার হাসপাতাল ভীতি ধরে গেছে একরকমের। আমি জানি আমি অসুস্থ হলে আসলে আমাকে সেবা করার কেউ নেই। আমার কাজগুলো করার কেউ নেই। আমার খাবার বানিয়ে দেবার কেউ নেই, আমার আবদার রক্ষা করার লোক নেই।

বড় হবার একটা ভীষণ যন্ত্রনা আছে। আপনি স্বাধীনতা পাবেন কিন্তু সেটা অন্যেরা কেড়ে নেবে। আপনার সময় কেড়ে নেবে ভালোবাসার নামে। উপার্জিত অর্থ কেড়ে নেবে দায়িত্বের নামে। আমি তাই অসুস্থ হতে চাই না, কারন আমাকে দেখে রাখার কেউ নাই।

মৃদু জ্বর, মাথা ব্যাথা, সর্দি কাশি, পেট ব্যাথা, মন খারাপ ইত্যাদি তাই আমার কখনো হয় না। আমি সহজে অসুস্থ হইনা। অসুস্থ হবার মত বিলাসিতা আমার নেই।