অতিরিক্ত তথ্যের যুগ
মানুষের জন্মের ইতিহাস কত বছরের?
একদম সঠিকভাবে বলা না গেলেও আমরা জানি আধুনিক মানুষ প্রায় ৩ লাখ বছর আগে আফ্রিকায় তাদের যাত্রা শুরু করেছিল। এই মানুষেরা Homo heidelbergensis বা একই ধরণের একটা প্রজাতি থেকে বিবর্তিত হয়েছিল। এরপর তারা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়া শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত মানুষের বাকি যত প্রজাতি ছিল তাদের প্রতিস্থাপন করে।
এই তথ্য অনেকেই জানেন না। জানার আসলে দরকারও নেই। আপনার ব্যক্তিগত জীবন যাপনে এই তথ্য কোন কাজে আসবে না।
আমরা বাস করছি এমন একটা সময়ে যখন অতীত সব মানুষের থেকে আমরা সবচেয়ে বেশি জানি। বেশি জানি বলাটা মনে হয় ভুল। আমরা অতীতের মানুষের থেকে বেশি তথ্য ভান্ডারের সাথে যুক্ত আছি।
পৃথিবীর তাবৎ জ্ঞান ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা জায়গায়। ইন্টারনেট নামক ইনফরমেশন হাইওয়েতে যুক্ত হওয়াতে আমরা এখন এই তাবৎ জ্ঞান হাতের মুঠোফোনেই বা কম্পিউটার স্ক্রিনে পেয়ে যাচ্ছি নিমিষে।
চিন্তা করে দেখুন প্রতিদিন কি পরিমানে বেদরকারি তথ্য আপনি হজম করছেন। সব যে কাজে লাগছে বা মনে রাখতে পারছেন তা কিন্তু নয়। এর কিছু আপনার মনে থাকছে আর কিছু অযথাই আপনি পড়ছেন বা দেখছেন সময় নষ্ট করে।
মিলিয়নের মত বই, পডকাস্ট, ভিডিও, গান, গল্প হাতের মুঠোয় থাকায় কোনটা ছেড়ে কোনটা ধরবেন সেটা ঠিক করতে পারছেন না। অস্থির হয়ে পড়ছে মানসিকতা। এই যে একটা প্রজন্ম Information Overload এর মধ্যে পড়ে গেছে, এরা সত্যিকার অর্থে কিছু শিখছে না বা করছে না।
অতিরিক্ত তথ্য প্রবাহের কারনে মানুষ আজকে মনোযোগ দিতে পারছে না সাধারণ কাজেও। মাল্টি টাস্কিং নামক একটা যন্ত্রনা নিজেদের জীবনে ঢুকিয়ে নেয়ায় কোন কাজেই তারা সফল হতে পারছে না। মানুষের মস্তিষ্ক একসাথে দুটো কাজে মনোযোগ দেয়ার জন্য তৈরি হয়নি। অতিরিক্ত এই তথ্যের যুগে সবাই মাল্টি টাস্কিং করতে গিয়ে গোলমাল পাকিয়ে ফেলছে ব্যাক্তিগত জীবনেও।
আপনি পড়ছেন বা লিখছেন আর একই সাথে গান শুনছেন, এই ধরনের কাজ করলে কোনটাই ঠিকমত হবে না। মোবাইলে স্ক্রীন খুললেই সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজনীতি, রান্না, বিনোদন, ধর্ম, শিক্ষা ইত্যাদি সকল কিছুর একটা জগা খিচুড়ি মার্কা তথ্যের ফিড ভেসে আসছে।
ক্ষতিটা কি হল?
সময় নষ্ট হল, কিছু শিখলেন না। এই সময়ে নিজের যে কাজ করতেন সেটাও হল না। অনেক তথ্য হজম করতে গিয়ে মস্তিষ্ক কোনটাই ঠিকমত নিতে পারল না। নিজের কাজের দরকারি তথ্য বাদেই বেহুদা রাজনীতির প্যাচাল ঢুকে গেল মাথায়। অথচ জীবনে কোনদিন আপনি রাজনীতি করবেন না।
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে তাই মাঝে মধ্যে দূরে থাকুন। অহেতুক নিজের মতামত দেয়া থেকে বিরত থাকুন। কারো পোস্টের কমেন্ট সেকশনে গিয়ে তাকে ভুল প্রমান করার কোন দরকার নেই। পারলে দিনের কয়েক ঘন্টা মোবাইল থেকে দূরে থাকুন।
হাজার হাজার বই পড়ারও আপনার দরকার নেই। পৃথিবীর সবকিছু জানতে হবে এমন দিব্যিও কেউ আপনাকে দেয়নি। অযথাই নিজের জীবনকে ব্যস্ত আর জটিল করে তুলবেন না।
আইনস্টাইন অনেক বড় বিজ্ঞানী ছিলেন। পৃথিবী বদলে দেয়া আবিষ্কার আছে তার। তারপরেও তিনি ভ্রমন করেছেন, বেহালা বাজাতেন, সাইকেল চালাতেন। যতটা পেরেছেন জীবনকে উপভোগ করেছেন। আপনি তার থেকে জ্ঞানী নন।
জীবন উপভোগ করতে শিখুন। তার আগে শিখুন কিভাবে এই অতিরিক্ত তথ্যের যুগে নিজেকে নিরাপদ রাখবেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন