দাওয়াত
দাওয়াত ব্যপারটাকে আমি এড়িয়ে চলি। দাওয়াত একটা চেইন রিএকশনের মত। কারো বাসায় দাওয়াতে গেলে ভদ্রতা করে আপনাকেও তাদের দাওয়াত দিতে হবে। তার মানে শুধু একদিন সময় নষ্ট হবে না, আরেকদিন সময় নষ্ট করার জন্য আপনাকে তৈরি থাকতে হবে।
বাঙালী সামজিকতা বেশিরভাগ সময়েই আমার ভাল লাগে না। এরা একসাথে হলেই নানা অনর্থক বিষয় নিয়ে বেহুদা ক্যাচাল করে। পারিবারিক দাওয়াতে না যাওয়ার আরেকটা প্রধান কারন হল, খাবার ভালো না হলেও মিথ্যে করে বলতে হয় খাবার মজা হয়েছে।
আমি যেখানে থাকি সেখানে বিরিয়ানি আর পোলাও এত ভাল পরিমানে পাওয়া যায় যে, কেউ আমাকে তার বাসায় নিয়ে এই দুটো খাইয়ে খুশি করতে পারবে না। তাই শুধু খাবার জন্য কোথাও যাওয়াটা আমার কাছে সময় নষ্ট মনে হয়।
আর বাকি থাকল আড্ডা দেয়া। দাওয়াতে গেলে যদি এমন কেউ না থাকে যার সাথে আড্ডা দিয়ে মজা পাওয়া যায়, তবে মনে হয় ইচ্ছে করে কেউ একজন আপনাকে শাস্তি দিচ্ছে। একদল বেকুব লোকের সাথে কয়েক ঘন্টা একটা বদ্ধ জায়গায় কাটানো একটা বড় ধরনের শাস্তি।
কোন একটা দাওয়াতে গেছি, কারো সাথে কিছু একটা আলোচনা করতে গেছি, দেখলাম আমার সব কথাতেই তিনি হ্যাঁ বলছেন, সম্মতিসূচক মাথা নাড়ছেন। বুঝলাম ভদ্রলোক আসলে আমার কথা মন দিয়ে শুনছেন না। আমার বক্তব্যের কোন পালটা যুক্তিও দিতে চাচ্ছেন না। এই ধরনের লোক পরে গিয়ে আমাকে বাচাল আর জ্ঞানপাপী বলবে।
আরেকদল লোক থাকে যারা অনবরত আপনার প্রশংসা করে যাবে। এরাও খুব বিরক্তিকর। প্রশংসা ভালো লাগে কিন্তু আমি নারসিসিস্ট নই যে অনবরত আমার কাজের প্রশংসা করে যেতে হবে। আমি যখন কারো সাথে সময় কাটাতে চাই, আমি এমন কাউকে খুঁজি যে যুক্তি দিয়ে আমার কথা খন্ডন করতে পারবে। তবেই একটা আলোচনা জমে।
আমাকে অসামাজিক বললেও আমার কিছু যায় আসে না। কারন আমার বেশিরভাগ বিপদের দিনেই আমি কোন ধরনের সাহায্য পাইনি এদের কাছ থেকে। না মানসিক, না আর্থিক কোনভাবেই। তাই এই অহেতুক সময়ক্ষেপন আমার করতে ভাল লাগে না।
একটা বয়সের পর আমি বুঝতে শিখেছি, কাউকে খুশি করার থেকে নিজেকে খুশি রাখাটা বেশি দরকার। লোকে কি বলবে এই ধারনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। পৃথিবীতে যে অল্প সময় থাকব সেখানে আরেকজনকে বা সমাজকে খুশি করার আমার কোন দরকার নেই। আমি রাজনৈতিক বা ধর্মীয় নেতা নই। আমাকে ভণিতা করে চলতে হবে না। আমি ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন